লংকাউয়ি ঈগল স্কয়ারে লেখক ও পরিবার
(মালয়েশিয়ার লংকাওয়ি ভ্রমণ-২)
অধ্যাপক আকতার চৌধুরী
কোন একটা দেশে গেলে আমার প্রথম থেকে আগ্রহ থাকে সেখানকার ভাষার প্রতি । হ্যান্ড টু মাউথ চলাফেরার জন্য কিছু কমন বিষয় । যেমন হাই হ্যালো , এটা কি ওটা কি এরকম কিছু শেখার চেষ্টা করি। মালয়েশিয়া আসার পর থেকে এ রকম কিছু বিষয় রপ্ত করার চেষ্টা করছি।যেমন , ‘সালামত দাতাং’ মানে ওয়েলকাম বা স্বাগতম । ‘তেরে মাকাসি’ মানে ধন্যবাদ , ‘চামা চামা’ মানে তোমাকেও ধন্যবাদ । দেশের ছেলে করিম ভাইকে পেয়ে এ ব্যাপারে অনেক সুবিধা লাভ করেছি।
আমাদের কক্সবাজারের মহেশখালীর ছেলে আবদুল করিম । দীর্ঘ ১২ বছর মালয়েশিয়ার লংকাউয়িতে আছেন। তিনি এখানকার রেসিডেন্স। বিয়ে করেছেন কম্বোডিয়ান বঙশোদ্ভুত। মালয়েশিয়ান সিটিজেন। ১ ছেলে ১ মেয়ে । ভাবি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন। মুসলিম হয়ে বিয়ে করেছেন করিম ভাইকে। ৮ বছর আগে তিনি লেখাপড়া শেষ করে শেফ হিসেবে জব করার জন্য এদেশে এসেছেন। করিম ভাই হার্ড ওয়ার্কার। নিজের কঠোর পরিশ্রম ও সততা দিয়ে এখন একজন প্রতিষ্ঠিত কনষ্ট্রাকশন ব্যবসায়ী লংকাউয়ির । কনস্ট্রাকশন ও হোটেল ব্যবসা করছেন। কাজের ফাঁকে দু’জনের পরিচয় । তারপর পরিণয় । বেশ সুন্দর সংসার জীবন তাদের। ভাবিও যথেষ্ট পরিশ্রমী ।
এখানে একটা বিষয় উল্লেখযোগ্য । মালয় মহিলারা বসে থাকার পাত্রী নয় । রান্না বান্না সংসার নিয়ে তারা পড়ে থাকেন না । লংকাউয়িতে সমানতালে মহিলারা ব্যবসা বাণিজ্য , চাকুরী করে যান। কিন্তু বাংলাদেশীদের রোগ করিম ভাইকে ছাড়তে পারেনি। বিয়ের পর আর কোন জব করতে দেন না বউকে। বলেন , আমি কষ্ট করছি। আমার বউও যদি জব করে তাহলে সংসার চালাবে কে । বাচ্চাদের দেখবে কে। ভাবি মেনেও নিয়েছেন।
লংকাউয়িতে আসার পর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে আমাদের ওনার হোটেলে।প্রতিদিন খেতেও নিয়ে যাচ্ছেন নিজের গাড়িতে । যেখানেই খেতে যাই সব মিষ্টি মিষ্টি খাবার । আমি কোন রকম মানিয়ে নিতে পারলেও আমার বউ বাচ্চাদের কাহিল অবস্থা । ভেতো বাঙ্গালী বলেযে আমাদের একটা বদনাম আছে। সব জায়গায় রাইচ খুঁজি। রাইচ পাওয়া যায় কিন্তু সাথে যে সব মেন্যু দেয় রাইচ আর খেতে ইচ্ছে হয় না।
এ কথা শুনে ভাবি দাওয়াতই দিলেন ভাতের। বাঙ্গালী খাবার রান্না করতে না জানলেও রিস্ক নিলেন ইউটিউব দেখে। যেহেতু তিনি শেফ হিসেবে মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন জব করতে তার কাছে ব্যাপারটা আনন্দেরই মনে হল।
আমরা করিম ভাইয়ের যে হোটেলে উঠেছি তার নাম পেরিন্টিস মোটেল । কুয়াহ এলাকায় । হোটেলের পাশেই ওনার বাসা । প্রায় অভুক্ত আমরা । তারপরও মন সায় দিচ্ছেনা দাওয়াতে যেতে। মনে হচ্ছিল ফলাফল একই হবে। মাঝখানে আমাদের অরুচি দেখে বেচারী মনে মনে কষ্ট পাবে।
আমরা দাওয়াতে যাব যাচ্ছি করে দেরী করছিলাম। এদিকে ভাবির তাগাদা । খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। অগত্যা দাওয়াতে গিয়ে দেখি টেবিল ভরা খাবার । আলু ভর্তা ,মরিচ ভর্তা , ডাল , সবজি , মুরগী , মাছ , গরু কোনটাই বাদ নেই । অবাক ব্যাপার । টেষ্ট ও বাঙ্গালীয়ানার। কৃতজ্ঞ পেট। ভাবি ভাবি বলতে অজ্ঞান ।
ভাবি নাইচ ফুড । ভাবি থ্যাংকস। ভাবিও আমাদের ওয়েলকাম বলে পেট ভরে খাওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানালেন । সাথে হেসে হেসে জানাতে ভুললেন না – ‘ভাবি’ইজ হারাম হিয়ার। বাট আই ডোন্ট মাইন্ড ।আই আন্ডার ষ্ট্যান্ড । বাট হিয়ার ‘ভাবি’ মীন পীগ মানে মালয় ভাষায় ‘শুকর’!
সেই থেকে আর ভাবি ডাকি না!
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।